মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া

কোন কিছু মনে রাখতে পারাকে স্মৃতিশক্তি বলা হয়। এখন অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এমন অবস্থায় তাদের অল্পতেই মন বিগড়ে যায়। এরকম অবস্থায় তাদের শুধু চেষ্টা করলেই হবে না, মহান আল্লাহর সাহায্যও কামনা করতে হবে। 

দোয়া আমাদের জন্য এমন এক অস্ত্র, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে মনোযোগ, স্মরণশক্তি এবং সফলতা চাইতে পারে। নিচের দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলা স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে দেন।


মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া

মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া

দোয়াটি হলো (আরবি):


ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ


বাংলা উচ্চারণ:

সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম।


অর্থ: (হে আল্লাহ) আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (২/৩২)


মনোযোগ বা স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য আমরা নিছে কোরআন সুন্নাহর আলোকে কয়েকটি দোয়া ও আমল উল্লেখ করলাম। যেগুলো আমল করার মাধ্যমে আপনি লাভবান হতে পারেন। যেমনঃ


দোয়া করা ও জিকির করা

মহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন কাজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ আমাদের সফলতার পথ দেখান এবং তিনি আমাদের সফলতা দেন। এজন্য সকলকে সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। 


যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। স্মৃতিশক্তি বাড়ার ক্ষেত্রে আমরা নিচের দুআটি পাঠ করতে পারি। যেমনঃ


رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا


বাংলা উচ্চারণ: 

রাব্বি যিদনি ইলমা


অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১১৪)


এছাড়াও জিকির বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন...। (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৪)


তাই আমাদের সবার উচিত জিকির, তাসবিহ (সুবহান আল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) এবং তাকবির (আল্লাহু আকবার) এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহকে স্মরণ করা।


পাপ থেকে দূরে থাকা

পাপের মাঝে ডুবে থাকলে এর ফল বা প্রভাব হলো দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের ভয়াবহ অন্ধকার এবং জ্ঞানের আলো দুটো একসাথে থাকতে পারে না। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, আমি (আমার শাইখ) ওয়াকিকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা বা অভিযোগ করেছিলাম। 


তখন তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি বা বিরত থাকি। তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হচ্ছে একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।


ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেন, এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আবদ-আল্লাহ, আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোন কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে, সেটি হচ্ছে পাপ করা ছেড়ে দেয়া। (আল-জামি : ২/৩৮৭)


যখন কোন ব্যক্তি পাপ কাজ করতে থাকে তখন সে ব্যক্তি উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত হতে থাকে। সে ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ব্যাপারে একেবারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে তার সমস্ত অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। 


জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই অবশ্যই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এবং কুরআন হাদিস অনুযায়ী আমল করা।


ইখলাস বা আন্তরিকতা

পৃথিবীতে যেকোন কাজে সফলতা অর্জনের মূল ভিত্তি হলো ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর এই ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। আমাদের নিয়ত এর বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন, উদ্দেশ্য ও নিয়ত হচ্ছে আমাদের আত্মার মতো কিংবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মতো। বুঝেন নাই না? বুঝিয়ে বলছি, বেশিরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি ঠিক একইরকম। 


কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন একেকটা চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে। তখন কিন্তু আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে আমাদের নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও ঠিক তত ভাল হবে।


এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত : ০৫)


তাই আমাদের সকালের নিয়ত হতে হবে এমন যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেন একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন। এবং আমরা যেন ইসলামের পক্ষে সেই জ্ঞান খরচ করি।


অন্যকে শেখানো

কোন কিছু মনে রাখার একটি উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো। আর এজন্য আমাদেরকে একই বারবার বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়তে হয়। আমরা যখন যেকোন বিষয়ে পড়ি এবং সেটা অন্যকে শেখাই সেটা বারবার পড়ার মাধ্যমে আমাদের স্মৃতিশক্তিতে গেঁথে যায়। 


মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া

মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া

মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর আমল করা

আমরা সকলে জানি, যেকোন বিষয় পড়া যতবার প্র্যাকটিস করা হয় তত আমাদের মনে থাকে। এবং এটি দৃঢ়ভাবে আমাদের মস্তিষ্কে জমা হয়। কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে এত বেশি পড়ার সুযোগ হয় না কিংবা আমরা পড়ি না।চাইলে আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারি। যেমনঃ 


আমরা আমাদের মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ বিশেষ সুন্নাহ ও নফল নামাজে তিলাওয়াত করতে পারি। এবং দোয়াগুলো পাঠ করতে পারি সালাতের পর। চাইলে আমরা অন্য যেকোন সময় পাঠ করতে পারি। এতে আমাদের একদিকে আমল করা হবে। এবং অন্যদিকে হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের কাজ হবে।


পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া

মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। আমরা যখন রাতে ঘুমানোর মাধ্যমে বিশ্রাম নেই, তখন মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। রাতের বেলা পরিমিত ঘুমালে আমাদের দিনের বেলা সংগৃহীত সকল তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত হয়। 


ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন এবং ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও দুপুরে সামান্য ভাতঘুম আমাদের মন-মেজাজ এবং সকর অনুভূতিকে চাঙা রাখে। তাছাড়া দুপুরে সামান্য ভাতঘুম একটি সুন্নাহও বটে। 


বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করা

একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, আমাদের সকলের মুখস্ত করার ধরণ কিন্তু এক নয়। কারো অল্প একটু পড়লে মুখস্ত হয়, আবার কারো দীর্ঘক্ষন পড়লেও ঠিক মত মুখস্ত হয় না। অনেকের আবার দিনের বেলা মুখস্ত কম হয়। রাতে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়। 


তাই মুখস্ত করার ক্ষেত্রে যেভাবে পড়লে আপনার সুবিধা হবে। যে সময় পড়লে আপনার মনে থাকবে, সে সময় পড়া উচিত। আর কুরআন মুখস্থ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মুসহাফ (কোরআনের আরবি কপি) ব্যবহার করুন। কারণ বিভিন্ন ধরণের মুসহাফে পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। 

আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ নিয়মিত ব্যবহার করেন। তাহলে আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যাবে এবং মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যাবে। এতে খুব তাড়াতাড়ি পুরো কুরআন মুখস্থ করতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ


হাল না ছাড়া

প্রতিটি কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না ছাড়া। যেকোন কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম একটু কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে যখন অভ্যাস হয়। তখন আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত শুরুতেই হাল না ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে নিয়মিত পড়া চালিয়ে জাওয়া।


মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণ

সুষম খাদ্য আমাদের মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ঘুম বাড়িয়ে দেয় এবং অলসতা সৃষ্টি করে। ফলে পড়ায় অমনোযোগী এবং অলসতা সৃষ্টি হয়। 


উপকারী খাদ্য যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি এবং বাচনিক সাবলীলতা বৃদ্ধি করে। আপনারা যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে। সেসব খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। Omega-3 ফ্যাট খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী।


জীবনের অপ্রয়োজনীয় বিষয়বলি ত্যাগ

বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা কমে জাওয়া অন্যতম কারণ হলো অহেতুক বিষয়ে অতিরিক্ত ভাবা। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলা। যখন কোন অহেতুক বিষয় কথাবার্তা বলি তখন ভালো কাজে মনোযোগ দিতে পারি না। 


আরো পড়ুন: সালাম দেওয়ার নিয়ম


মাঝে মাঝে আমাদের এমন অবস্থা হয় যে, সালাতের কিছু অংশ আদায় করার পর মনে রাখতে পারি না। ঠিক কতোটুকু সালাত আমরা আদায় করেছি। এর মূল কারণ হচ্ছে গান-বাজনা শোনা, বিভিন্ন মুভি দেখা, আড্ডাবাজি করা, ফেইসবুকিং ইত্যাদি নানান অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে থাকা। তাই আমাদের সকলের উচিত এসব কাজ থেকে বিরত থাকা।


শেষকথা?

লেখকের উপদেশ, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আয় করুন। ইসলামের সকল বিধান মেনে চলার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আপনাদের বরকত দান করবেন। আমিন

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post