কালোজিরা সর্বরোগের মহৌষধ। এর রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতা। বলা হয়, মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপকার করে কালোজিরা। এটি আমাদের শরীরের নানান রোগের ঔষধ হিসেবে খাওয়া হয়। অন্তত উপকারী এই কালোজিরা টানা ৭ দিন খেলে কি হয়? প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়। অর্থাৎ আমরা আজকে কালোজিরা সম্পর্কে সমস্ত কিছু খুব অল্প সময়ের মধ্যে জানবো। তাহলে চলুন প্রথমে কালোজিরার উপকারিতা সমূহ জেনে নেই।
![]() |
কালোজিরা উপকারিতা - কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা |
কালোজিরা উপকারিতা?
কালোজিলার উপকারিতা সম্পর্কে সারাদিন বললেও তা বলা শেষ হবে না। কারণ এর রয়েছে অসাধারণ রোগ নিরাময় ক্ষমতা। কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজমের সমস্যা দূর, ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের উজ্জ্বল বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরও বেশি কিছু উপকারী গুণাগুণ রয়েছে যা আমরা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করেছি।
টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়?
নিয়ম করে টানা ৭ দিন কালোজিরা খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। টানা সাতদিন কালোজিরা খেলে শরীরের বেশ কিছু চেজ দেখতে পারবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, এলার্জি এবং পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা?
কালোজিরার রয়েছে বেশ কিছু উপকারী গুণ। এগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। আসুন প্রথমে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। যেমনঃ
১. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে
কালোজিরা ডায়াবেটিক অবস্থায় কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কালোজিরা দেহের থাইমোকুইনোন রক্তের বাড়তি গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে৷ কালোজিরার নির্যাস খালি পেটে কিংবা খাবার ২ ঘন্টা পরে উভয় ক্ষেত্রেই শর্করা কমাতে বেশ সহায়ক।
২. বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ দূর
চর্মরোগ আক্রান্ত স্থান সুন্দর করে ধূয়ে পরিস্কার করে কালোজিরার তেল মালিশ করলে। এবং একই পদ্ধতিতে এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও সমপরিমাণ মধু সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন সেবন করলে চর্মরোগ দূর হতে পারে।
৩. স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি
কালোজিরা মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। কালোজিরা খেলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়।
এবং আমাদের স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। স্মরণশক্তি ব্যক্তির জন্য এক কাপ রঙ চায়ের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেতে পারেন, দৈনিক অন্তত দুই থেকে তিন বার।
৪. সর্দি দূর করতে
সর্দি দূর করতে কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। শুধু ঘরে থাকা এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খান। পারলে এই তেল ঘাড়ে ও গর্ধানায় মালিশ করেন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি সর্দি দূর হয়ে গেছে।
৫. বাতের ব্যথা দুর করতে কালোজিরা
বাতের ব্যথা দূর করতে নিয়মিত কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এছাড়াও দৈনিক এক চা চাপম কাঁচা হলুদের রস এবং সঙ্গে পরিমাণ মতো কালোজিরার তেল ও মধু মিশিয়ে খান। এতে ধীরে ধীরে বাতের ব্যথা কমে জাবে।
আরো পড়ুন: খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
৬. শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ
যাদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিজনিত রোগ রয়েছে। তারা দৈনিক কালোজিরা খেতে পারেন। এটি শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপনারা প্রতিদিন ভাতের সাথে কালোজিরা ভর্তা তৈরি করে খান।
এবং এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ কিংবা এক চাপ রং চায়ের সাথে দিনে দুই বার খান। এতে আপনার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি ধীরে ধীরে উপসম হবে।
৭. ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে
উজ্জ্বলতা আমাদের সকলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে অত্যন্ত উপকারী কালোজিরা। কালোজিরায় থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান। ত্বকের ভিতর থেকে উজ্জলতা ও তারুণ্য ধরে রাখে।
৮. চুল পড়া বন্ধ করে
চুলের পুষ্টির জন্য কালোজির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যেসব পুষ্টির অভাবে আমাদের চুল অকালে ঝরে যায়। সেই পুষ্টির ঘাটতি গুলো পূরণ করে কালোজিরা। তাই নিয়মিত কালোজিরা খান এবং কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করুন।
৯. আমাশয় নিরাময়
আমাশয় সমস্যা দূর করতে কালোজিরা একটি কার্যকরী খাবার। আপনি আমাশয় নিরাময়ে করার জন্য নিয়ম মেনে কালোজিরা খেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় দৈনিক এক চা চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে খান। আশাকরি যায় খুব তারাতাড়ি আমাশয় নিরাময় হবে। ইনশাআল্লাহ
১০. দাঁত ব্যথা দূর করতে
দাঁতের ব্যথা দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এই কালোজিরা। দাঁতের ব্যথা দূর করার জন্য কুসুম গরম পানিতে একটু কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে জাবে। এভাবে কুলি করার ফলে দাঁতের ব্যথার সাথে জিব্বাহ, তালু এবং দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন জীবাণু মরে।
![]() |
কালোজিরা উপকারিতা - কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা |
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা?
অতিরিক্ত কিংবা দীর্ঘদিন কালোজিরা খেলে পাকস্থলীর সংকোচন, ত্বকে প্রদাহ, বুক জ্বালা এবং বমি বমি ভাবও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তাই অবশ্যই এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে কালোজিরা খেতে হবে। নিম্নে কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা। যেমনঃ
১.নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জন্য
যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই এবং যারা নিম্ন রক্তচাপের রোগী তাদের জন্য কালোজিরা খাওয়া ক্ষতিকরও হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপের রোগীরা কালোজিরা অতিরিক্ত গ্রহণে রক্তচাপ কমে গিয়ে ক্লান্তি কিংবা দুর্বলতা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই এ সমস্ত রোগীদের কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
২. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনভাবেই গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়া যাবেনা। কেননা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. দীর্ঘদিন সেবনের ক্ষেত্রে
দীর্ঘদিন ধরে কালোজিরা খাওয়া, অর্থাৎ তিন মাসের বেশি যখন একটানা কালোজিরা খাওয়া হবে। তখন একজন মানুষের পাকস্থলী সংকোচন, বুক জ্বালাপোড়া, ত্বকের প্রবাহ কিংবা বমি বমি ভাব হওয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা হচ্ছে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিভিন্ন ব্যথা যেমনঃ পেটের ব্যথা, মাথাব্যথা এমনকি বাত ব্যথাও কমায়। এছাড়াও জ্বর, সর্দি, কাশি এবং হাঁপানির মতো রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা চিবিয়ে খেলে শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং হজম শক্তি উন্নত হয়। এছাড়াও যেমনঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- ব্যথানাশক
- সর্দি-কাশি নিরাময়
- হজমশক্তি বৃদ্ধি
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং
- মেদ কমাতে সাহায্য করে।
শেষকথা?
কালোজিরা আমাদের প্রত্যেকের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। শীতকালে একটু ঠান্ডা লাগলেই সর্দি-কাশি এবং জ্বরের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তখন আমরা হয়তো ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাই। কিন্তু এই ছোট ছোট রোগ গুলোর জন্য ঔষধ খাওয়া আমাদের শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।
সবচেয়ে ভালো হয়, প্রাকৃতিক নিয়মে এই ছোট ছোট রোগগুলো নিরাময় করা। তাই আমি পরামর্শ দিচ্ছি সামান্য সর্দি, হাঁচি কাশি হলে ঔষধ না খেয়ে সকালে খালি পেটে কিংবা ভাতের সাথেও কালোজিরা ভর্তা করে খেতে পারেন।
তবে হ্যাঁ, আপনার যদি জন্য অধিক পরিমাণে জ্বর কিংবা বড় কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনি ডক্টরের কাছে যেতে পারেন। তো আজকের মতো এ পর্যন্তই এরকম ইনফরমেটিভ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

