ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

বর্তমান বিশ্ব যেন আধুনিকরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রতিটি দেশে ব্যবসা-বাণিজ থেকে শুরু করে। সকল ক্ষেত্রে টেকনোলজি ব্যবহার করছে। প্রতিটি সেক্টরে টেকনোলজির নতুন নতুন উদ্ভাবন ঘটছে। আমাদের দেশেও টেকনোলজি ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালন হচ্ছে। আর এই টেকনোলজি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করাকে ই-কমার্স বলে।


ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ


ই-কমার্স মূলত একটি আধুনিক ব্যবসায় পরিচালন পদ্ধতি। যার মাধ্যমে খুব সহজে ব্যবসায় পরিচালন করা যায়। আর তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো। ই-কমার্স কি, ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি।


ই-কমার্স কি?

ই-কমার্স হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কেনা বেচার একটি প্রক্রিয়া। যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন পূর্ণ বা সেবা অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। তখন সে পদ্ধতি কিংবা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমকে ই-কমার্স বলে। ই-কমার্স এর মাধ্যমে ঘরে বসে ২৪ ঘন্টায় কেনাকাটা করা যায়। 

এছাড়াও একই সাথে পণ্যের সু-বিশাল সমাহার তো রয়েছেই। আবার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন সরাসরি পণ্য স্পর্শ করতে না পারা। প্রতারণার ঝুঁকি কিংবা ভুয়া কোম্পানির ভাদে পড়া। তাই আসুন আমরা ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জেনে আসি।


ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ?

আপনারা যদি ভবিষ্যৎ এ কোন ই-কমার্স প্রতিষ্টান গড়ে তোলার কথা চিন্তা ভাবনা করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ই-কমার্স সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এছাড়াও ই-কমার্স ব্যবসায়ের জন্য ক্রেতাদের কি ধরণের সুবিধা দিতে হবে। এসকল বিষয় আপনাকে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে হবে। আর তাই আমরা নিচে ক্রিতাদের সুবিধা, বিক্রেতাদের সুবিধা, ক্রেতাদের অসুবিধা এবং বিক্রেতাদের অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। 


ক্রেতাদের জন্য সুবিধা?

১. ঘরে বসে কেনাকাটা

ই-কমার্সের মাধ্যমে যেহেতু আপনার হাতে থাকা ফোন থেকে অর্ডার করে সব পাচ্ছেন। তাই আপনাকে আর কষ্ট করে গরমের মাঝে যানজট আর ভিড় অপেক্ষা করে বাজারে যেতে হবে না। তাছাড়া আপনি যদি ঢাকা শহরের মতো কোন ব্যস্ততম শহরে থাকেন। তাহলে তো জানেন! গরমে জ্যাম আর ভিড় অপেক্ষা করে কেনাকাটা করা কতটা বিরক্তির।


২. সময় এবং খরচের সাশ্রয়

ই-কমার্স এর মাধ্যমে কেনাকাটা করলে মূল্যবান সময় যেমন বাঁচে। তেমনি পরিবহনের খরচও সাশ্রয় হয়। এখানে মূল্যবান সময় বাচার পাশাপাশি আপনার অর্থও সাশ্রয় হবে।


৩. বিভিন্ন অপশন থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ

ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোতে সকল ধরণের পণ্য মজুদ থাকে। ফলে আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড, পণ্যের দাম এবং পণ্যের গুণগতমান যাচাই করে ক্রয় করতে পারবেন।


৪. দরদাম ছাড়াই কেনাকাটা করা সম্ভব

ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একই প্রোডাক্টের দাম বাছাই করে কিনতে পারবেন। আপনাকে আর দোকানে দোকানে ঘুড়ে পণ্যের দাম জিজ্ঞেস করতে হবে না।


ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ



বিক্রেতাদের জন্য সুবিধা?

১. অল্প পুঁজিতে ব্যবসায় করা যায়

সাধরণত ফিজিক্যাল দোকানে একসাথে সব পণ্য মজুদ করা লাগে। কিন্তু ই-কমার্স ব্যবসায় অল্প পুঁজি দিয়ে কম পণ্য মজুদ করলে হয়। এবং এখানে কর্মচারীরও প্রয়োজন হয় না।


২. আন্তর্জাতিক মার্কেটে বিক্রির সুযোগ

ই-কমার্স ব্যবসায় দেশ থেকে শুরু করে বিদেশেও ব্যবসায় পরিচালন করা যায়। যেটা ফিজিক্যাল দোকানে একেবারে অসম্ভব। 


৩. ২৪/৭ খোলা থাকে

ই-কমার্স ব্যাথিত ফিজিক্যাল দোকান সাধারণত একটি নিদিষ্ট সময় পযন্ত খোলা রাখা যায়। কিন্তু ই-কমার্সে আপনি দিনের ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে ৭ দিন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবসায় চালাতে পারবেন।


৪. ডিজিটাল মার্কেটিং এবং SEO-এর মাধ্যমে ক্রেতা বৃদ্ধির সুযোগ

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করে বিক্রি বৃদ্ধি করতে পারবেন। এছাড়া ইমেইল ক্যাম্পেইন ও গুগল সার্চ Seo করে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবেন।


ক্রেতাদের জন্য অসুবিধা?

১. ডেলিভারি জটিলতা

ডেলিভারির ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রয়োজনীয় সময় পণ্য হাতে পেতে বিলম্ব হয়। আবার sensitive product ক্ষতিগ্রস্তের মতো গঠনা ঘটে থাকে। 


২. ফেরত দেওয়ার ঝামেলা

পণ্য ফেরত দিতে গেলে অনেক ওয়েবসাইট নানান শর্ত দিয়ে থাকে। যা ক্রেতার জন্য অধিক অর্থ খরচ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। পণ্য ফেরত দেওয়া সত্যি একজন ক্রেতার কাছে বিরক্তিকর ঘটনা।


৩. পণ্য সরাসরি স্পর্শ করার সুযোগ না থাকা

ই-কমার্স সাইটে পণ্য কেনার আগে সরাসরি পণ্য স্পর্শ করার সুযোগ থাকে না। এটি অনেক টা জটিল প্রক্রিয়া শুধুমাত্র ছবি ও পণ্যের রেটিং দেখে পণ্য ক্রয় করতে হয়। যা অনেক সময় হতাশাজনক হতে পারে।


৪. প্রতারণার ঝুঁকি

ই-কমার্সে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা নকল বা খুবই কম মানের পণ্য দিয়ে থাকে। তাই পণ্য কেনার আগে বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট দেখে পণ্য ক্রয় করতে হবে।


বিক্রেতাদের জন্য অসুবিধা

১. ওয়েবসাইট তৈরি ও তার নিরাপত্তা


ওয়েবসাইট শুধু তৈরি করলে নয় এটিকে হ্যাকার মুক্ত রাখতে হবে। যা একজন সাধারণ মানুষ এর পক্ষে সম্ভব নয়। ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অবশ্যই একজন ভালো ওয়েব ডেভলপার হতে হবে।


২. শুরুর দিকে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা কঠিন

নতুন ই-কমার্স ব্যবসায়ের জন্য ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে আবার প্রতিযোগিতাও রয়েছে। মার্কেটে টিকে থাকতে হলে অন্যদের মতো ক্রেতাদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।


৩. ডেলিভারি ও রিটার্ন সমস্যা

ফিজিক্যাল দোকানে ক্রেতা নিজে প্রোডাক্ট ক্রয় করে। কিন্তু ই-কমার্সে ব্যবসায় ডেলিভারি সময়মতো করা, রিটার্ন নেওয়া এবং কাস্টমার অভিযোগ সামলানো অনেক কঠিন।


৪. মার্কেটিং ও seo না বুঝা

ই-কমার্স ব্যবসায় মার্কেটিং ও seo করতে হয়। কিন্তু এসবের কোনটাই না জানার কারণে বিজ্ঞাপন ক্রেতার কাছে পৌছায় না৷ ফলে কাঙ্ক্ষিত বিক্রি আসে না।


ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ



বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ?

বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। কেননা দিন যত যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার মতো আমাদের দেশেও নতুন নতুন টেকনোলজির উদ্ভাবন ঘটছে৷ তাই আসা করা যায় বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ  উজ্জ্বল। নিচে বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচনা করা হল।


১. প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধির সাথে মানুষ এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছে। দিন দিন বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতা। তাই আশাকরা যায়, আগামী দিনে ই-কমার্স বাংলাদেশের আরও সমৃদ্ধ হবে।


২. নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

সময়ের সাথে ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোতে আসতাছে নতুন নতুন ফিচার। যা কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ ও উন্নত করে তুলবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ই-কমার্স আরও স্মার্ট বাজার হয়ে উঠছে।


৩. মোবাইল কমার্সের বিস্তার

দিন যত যাচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার ফলে মোবাইল কমার্স (m-commerce) দ্রুত বাড়ছে। এখন বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করতে পছন্দ করে থাকে।


৪. ডিজিটাল পেমেন্টের উন্নতি

দেশে এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাসহ ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম উন্নত হওয়া ফলে মানুষ এখন অনলাইন পেমেন্ট করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। যা ই-কমার্স ব্যবসায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


শেষকথা? 

ই-কমার্স কি এতক্ষণে আপনারা হয়তো স্পষ্ট ভাবে জানতে পারছেন। এটি সাধারণত অনলাইন নির্ভর একটি ব্যবসায় সিস্টেম। ই-কমার্স ব্যবসায়ের জন্য যথাযথ ধারণা থাকা আবশ্যক। ই-কমার্স সাইট তৈরি, বিজ্ঞাপন প্রচার একটি জটিল প্রক্রিয়া। 

তবে আপনাদের সুবিধার্থে আপনাদের বুঝানোর জন্য আমরা আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। আশাকরি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ বুঝতে পারছেন। যদি কোন বিষয় বুঝে না থাকেন বা কোন বিষয় প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post