সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে

ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দেশ। সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির অর্থনীতিকে সচল রাখতে। এবং দেশটির নতুন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যকর করতে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে প্রচুর দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশ থেকেও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সিঙ্গাপুরে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে থাকে। এবং অনেক বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরের সৌন্দর্য দেখার জন্য ভ্রমণ করে।

সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে

সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে


সিঙ্গাপুরে যেতে হলে নির্দিষ্ট যোগ্যতা, খচর এবং বেশ কিছু নিয়ম মেনে সিঙ্গাপুরে যেতে হয়। আর তাই আপনারা জারা সিঙ্গাপুর যেতে চান তাদের জন্য আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে, সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা কত? সিঙ্গাপুরে শ্রমিকদের চাহিদা কেমন ইত্যাদি বিষয় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয় আলোচনা করা যাক।


সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর ভিসার খরচ সাধারণত ভিসা ক্যাটাগরি ও এজেন্সির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়ে থাকে। সবচেয়ে কম খরচে ভিসা পাওয়া যায় সরকারিভাবে। সিঙ্গাপুর ভিজিট ভিসা খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা হয়ে থাকে। 

সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। এবং সিঙ্গাপুর স্টুডেন্ট ভিসা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পযন্ত খরচ হয়ে থাকে। তবে বেসরকারি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করলে খরচ আরও বেশি হতে পারে। যারা পরিচিত কোন আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে থাকে। তাদের খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়।


সিঙ্গাপুর শ্রমিক নিয়োগ ২০২৫

সিঙ্গাপুরে শ্রমিক নিয়োগ সাধরণত কাজের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিয়োগ কনস্ট্রাকশন, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডেলিভারি ম্যান, ড্রাইভার এবং টেকনিশিয়ান ইত্যাদিতে হয়ে থাকে। তাই সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই এসব কাজের মধ্যে যেকোন একটিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। 

কেননা দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আপনি যদি যেকোন একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করে সিঙ্গাপুর যান। তাহলে আপনি মাস শেষে ভালো পরিমাণে বেতন পেতে পারেন।


সিঙ্গাপুর যেতে কি কি যোগ্যতা লাগে?

সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আপনি যদি সিঙ্গাপুর যেতে চান, তাহলে অবশ্যই বেশ কিছু ফরমালিটি মেনে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কাগজপত্র অবশ্যই ঠিক থাকতে হবে। বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি যোগ্যতা ও ডকুমেন্টস প্রয়োজন। যেমনঃ


১. বয়সসীমা 

সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীর বয়সসীমা ২১ হতে সর্বোচ্চ ৪৫ বয়সের মধ্যে হতে হবে।


২. মেডিকেল রিপোর্ট

সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য আপনার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এটি আপনার শরীর সুস্থতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।


৩. জাতীয় পরিচয়পত্র 

সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড থাকতে হবে। আপনি যখন ভিসা প্রসেসিং করবেন তখনই আপনার এই পরিচয় পত্র প্রয়োজন হবে।


৪. বৈধ পাসপোর্ট

অবশ্যই ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট বৈধ ও কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে। মনে রাখবেন আপনার পাসপোর্টের দুটি পাতা ফাঁকা থাকা আবশ্যক।


৫. ব্যাংক স্টেটমেন্ট

অবশই আপনাকে গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। এটি মূলত সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য আপনি উপযুক্ত কিনা তা প্রমাণ করবে।


৬. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

আবেদনকারী কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কিনা। এটি যাচাই এর জন্য অবশ্যই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।


সিঙ্গাপুর ভিসা কত টাকা?

সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা প্রসেসিং চালু রয়েছে। প্রতিটা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসার দাম আলাদা হয়ে থাকে। যেমনঃ


  • সিঙ্গাপুর ফ্যামিলি ভিসার দাম সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ পযন্ত হয়ে থাকে।
  • সিঙ্গাপুর স্টুডেন্ট ভিসার দাম সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে। তবে স্কলারশিপ কিংবা সরকারি সহযোগিতা পেলে এই ভিসা অনেক কমও হয়ে থাকে।
  • সিঙ্গাপুর ক্লিনার ভিসার দাম সর্বনিম্ন চার লাখ  থেকে পাঁচ লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
  • সিঙ্গাপুর ড্রাইভিং ভিসার দাম সর্বনিম্ন ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
  • সিঙ্গাপুর কোম্পানি ভিসার দাম সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।


তবে অনেক সময় দেখা যায় দালাল চক্রের কারণে সিঙ্গাপুর ভিসার দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে থাকে। আপনারা যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাতে পারেন। তাহলে হয়তো এই দালাল চক্রের হাত থেকে বেঁচে যাবেন। এবং খুব কম দামে সিঙ্গাপুর ভিসা পেয়ে যাবেন।


সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে

সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে


সিঙ্গাপুরের বেতন কেমন?

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি সব ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি এই দক্ষতার প্রাধান্য দেওয়া হয় বেতনে। বেতন সাধারণত নির্ধারণ করা হয় দক্ষতার ভিত্তিতে। দক্ষতা অনুযায়ী কারও বেতন কম কিংবা বেশি হয়ে থাকে। তাহলে চালুন সিঙ্গাপুরের বেতন কেমন তা দেখে নেওয়া যাক। যেমনঃ


১. অভিজ্ঞ শ্রমিক 

অভিজ্ঞতা কাজকে সুসম্পন্ন করার জন্য খুবই কার্যকর। অভিজ্ঞতা মানুষকে সাফল্যে পৌঁছে দেয়। তাই যেকোন কাজ শুরু করার আগে দক্ষতা অর্জন করা দরকার। সিঙ্গাপুরে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিকদের বেতন ১ লাখ টাকা বা তার বেশি হতে পারে।


২. নতুন শ্রমিক

অভিজ্ঞ শ্রমিকদের থেকে নতুন শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কম হয়ে থাকে। সিঙ্গাপুরে নতুন শ্রমিকদের বেতন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।  


৩. ওভারটাইম

ওভারটাইম কে কাজে লাগিয়ে অনেকে মূল বেতনের মত অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করে। যা মাসিক আয় বৃদ্ধি করে থাকে। এই ওভারটেমের মাধ্যমে মাসে লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায়।


সিঙ্গাপুর ভিসা নিয়ে প্রতারণা কীভাবে এড়াবেন?

বিশেষ করে সিঙ্গাপুর শ্রমিক ভিসার ক্ষেত্রে অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে। এগুলো মূলত দেশে কিংবা বিদেশে অসাধু মানুষেই করে থাকে। এজন্য অবশ্যই ভিসা আবেদনকারীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

বিশেষ করে সন্দেহজনক কিংবা অচেনা এজেন্টের সাথে লেনদেন করা যাবে না। এবং নির্ভরযোগ্য ও সরকারি স্বীকৃত এজেন্টের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে হবে। 


বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর বিমান ভাড়া কত?

আপনার অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর বিমান ভাড়া কত টাকা। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর বিমান ভাড়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পযন্ত। বিমান ভাড়া সাধারণত আপনার বিমান টিকিট এর উপর নির্ভর করে থাকে। 


বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর যেতে কত সময় লাগে?

স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২,৮৭০ কিলোমিটার (km) বা প্রায় ১,৭৮৩ মাইল দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে এই পথ বিমানে করে পাড়ি দিতে প্রায় 5 ঘন্টা সময় লাগে।


শেষকথা?

সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনার উপর। আপনি যদি আগে থেকে সুন্দর করে পরিকল্পনা করে। হোটেল ভাড়া, বিমান টিকিট, ব্যক্তিগত খরচ হিসাব করে খরচ করেন। এবং বিশ্বস্ত এজেন্ট এর মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে পারেন। তাহলে খুব অল্প টাকায় আপনি সিঙ্গাপুর যেতে পারবেন। তবে আপনি যদি বিলাসিতা করেন, এবং টাকা খরচ করতে কোন দ্বিধাবোধ না করেন। 

তাহলে আপনার খরচ সাধারণ ভ্রমণের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। তাই আপনি যদি কম টাকায় সিঙ্গাপুর যেতে চান। তাহলে সঠিক এজেন্সি এবং যাবতীয় খরচ আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখবেন। আপনি যদি সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন। তাহলে আপনার আর জানতে বাকি নেই সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে। এরপরও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post