লাল শাকে কি এলার্জি আছে

লাল শাক একটি শীতকালীন সবজি। এটি বাংলাদেশের প্রায় মানুষেই পছন্দ করে থাকে। লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A, C, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। লাল শাক বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি পুষ্টিকর সবজি। তবে হ্যাঁ, যাদের অধিক পরিমাণে এলার্জি তাদের লাল শাক না খাওয়াই ভালো।

লাল শাকে কি এলার্জি আছে

লাল শাকে কি এলার্জি আছে


লাল শাক যদিও বা এলার্জির জন্য তেমন কাজ করে না। তবে কিছু কিছু মানুষের লাল শাক খেলে এলার্জি ভাসতে পারে। তাই আসুন কাদের জন্য লাল শাক খাওয়া জাবে না। এবং কাদের জন্য লাল শাক খাওয়া উপকারী এসব বিষয় নিম্নে আলোচনা করি।


লাল শাকে কি এলার্জি আছে?

অনেকে বলে থাকেন লাল শাকে এলার্জি আছে। কিন্তু এটা কতটা সত্য তা আমরা কেউ স্পষ্ট জানি না। হ্যাঁ লাল শাকে এলার্জি রয়েছে, যাদের দুলাবালিতে বা বংশগতভাবে এলার্জি রয়েছে তাদের জন্য লাল শাক ক্ষতিকর হতে পারে। যদি আপনার বংশগত এলার্জির সমস্যা থাকে। তাহলে আপনি অল্প পরিমাণে লাল শাক খেয়ে দেখতে পারেন। 


এলার্জির লক্ষণ সমূহ?

যাদের বংশগত এলার্জি রয়েছে, কিন্তু জানেন না। এখন চিন্তা করতাছেন লাল শাক খাবেন কিনা। তারা অল্প পরিমাণে লাল শাক খেয়ে দেখতে পারেন। আর অবশ্যই এলার্জিন লক্ষণ গুলো মনে রাখুন। যেমনঃ 

শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি, চুলকানি, লালচে ভাব, চোখ ফুলে যাওয়া, বমি ভাব  এগুলো দেখা দিলে ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তীতে আর লাল শাক খাবেন না। 

লাল শাকে কি এলার্জি আছে

লাল শাকে কি এলার্জি আছে




লাল শাকের উপকারিতা?

যদি শরীরে এলার্জি না থাকে, তাহলে একজন মানুষকে অবশ্যই লাল শাক খাওয়া দরকার। লালশাক পরিপূর্ণ একটি পুষ্টি যুক্ত খাবার। অনেক ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায় এই লাল শাকে। তাই চলুন আমরা নিচ্ছে দেখে নেই লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। যেমনঃ


১. ডায়াবেটিকস

লালশাক মূলত আমাদের দেহের রক্ত শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। ফলে পুষ্টি উপাদানগুলো ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।


২ শক্তি বৃদ্ধি

লাল শাকে রয়েছে রিবোফ্লাভিন ও থায়ামিন। এই উপাদান গুলো শরীরে শক্তি উৎপাদন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


৩. চুল

লাল শাকে থাকা রিবোফ্লাভিন নামক পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবু ও চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। তাই বলাই যায় চুলের জন্য লালশাক একটি আর্দশ খাবার।


৪. রক্তস্বল্পতা দূর

লাল শাকে থাকা আয়রন ও ভিটামিন বি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে যাদের অ্যানিমিয়া আছে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তশূন্যতার মতো জটিল সমস্যা আস্তে আস্তে কমতে থাকে।


৫. স্কার্ভি প্রতিরোধ

লালশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই   ভিটামিন সি এর অভাবে যাদের স্কার্ভি রোগ রয়েছে। তাদের জন্য লালশাক খাওয়া খু্বই দরকার। কেননা লালশাকে রয়েছে স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা।


আরো পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়


৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

লাল শাক রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। লালশাকে থাকা বিটাকারোটিন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখতে পারেন। 


৭. গর্ভাবস্থায়

লাল শাকে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফলিড এসিট গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও লাল শাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করে। এবং স্তন্যদান সময় দুগ্ধ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


৮.দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি

লাল শাক খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি। ভিটামিন-এ এর ভান্ডার এক বাটি লাল শাকে রয়েছে মানুষের দৈনিক চাহিদার ৯৭% ভিটামিন-এ। অর্থাৎ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক যে পরিমাণ ভিটামিন-এ দরকার তা একবাটি লাল শাকে রয়েছে। 


শুধু তাই নয়, এই লালশাকে রয়েছে জিয়াজ্যানথিন, লুটেইন, বিটা ক্যারোটিন এবং রিবোফ্লাভিন। এসমস্ত উপাদান  ম্যাকুলাকে রক্ষা এবং চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে। তাই আপনি যদি নিয়মিত লাল শাক খান। তাহলে চোখে পানি পড়া, রাতকানা এবং চোখের অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন।


লাল শাকে কি এলার্জি আছে

লাল শাকে কি এলার্জি আছে


লাল শাকের অপকারিতা?

বাংলাদেশে লাল শাক একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরের জন্য উপকারী। তবে হ্যাঁ এটির বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। 

অতিরিক্ত লাল শাক শরীরের এলার্জি, হজমের সমস্যা এবং অন্যান্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই আসুন লাল শাকের অপকারিতা গুলো একে একে দেখে নেওয়া যাক। যেমনঃ


১. অতিরিক্ত আয়রন শরীরে ক্ষতি করতে পারে

লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যদিও আয়রন রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, কিন্তু অতিরিক্ত আয়রন যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে লিভার ও কিডনির উপর চাপ পড়ে। ফলে শরীরে আয়রন ওভারলোড হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হিমোক্রোমাটোসিস নামের রোগ সৃষ্টি হতে পারে।


২. এলার্জি সমস্যা হতে পারে

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি লাল শাক খেলে অনেকের এলার্জি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের পোলেন এলার্জি রয়েছে। তাদের লাল শাক খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত।


৩. গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা

লাল শাকে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায়। এটি সুস্থ মানুষের জন্য হজমে সহায়ক। কিন্তু শারীরিক দুর্বল মানুষদের জন্য এটি উল্টো সমস্যা সৃষ্টি করবে। যার কারণে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিবে।


৪. অক্সালেটের কারণে কিডনির ক্ষতি

লাল শাকে অক্সালেট নামক একধরণের যৌগ থাকে। যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে কিডনি স্টোন তৈরি করতে পারে। তাই যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের লাল শাক খাওয়া একেবারে অনুচিত।

আরও পড়ুন: গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা


৫. দূষিত শাক থেকে বিষক্রিয়া

লাল শাক উচ্ছ ফলনের আসায় অনেক চাষী অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে। এগুলো ঠিকভাবে ধোয়া এবং পর্যাপ্ত সেদ্ধ না হলে শরীরে বিষক্রিয়া, বমি ও পেট ব্যথা হতে পারে। তাই খাওয়ার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করা জরুরি।


৬. গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে সতর্কতা

গর্ভবতী মহিলারা লাল শাক খেতে পারেন। তবে খুবই অল্প পরিমাণে। অতিরিক্ত লাল শাক খেলে আয়রন ও ফোলেটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। যা গর্ভে থাকা শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পরতে পারে।


শেষকথা?

প্রিয় পাঠক বন্ধুগন আপনারা হয়তো এতক্ষণে জানতে পারছেন লাল শাকে কি এলার্জি আছে। লাল শাক কাদের জন্য উপকার এবং কাদের জন্য ক্ষতিকর। যদি আপনার পূর্ব থেকে কোন এলার্জি না থাকে তাহলে আপনি লাল শাক খেতে পারেন। লাল শাক রক্ত পরিস্কার করার জন্য খুবই কার্যকর। 

তাই শীতকালে সপ্তাহে একদিন হলেও এই লাল শাক খান। তো বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি এ পযন্ত। আগামী আর্টিকেল কোন বিষয় দেখতে চান তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এবং আর্জকের এই আর্টিকেলটি থেকে যদি কোন উপকার হয়ে থাকে। তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post