মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন

আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর আজকের এই বিশ্বে মোবাইল ফোন আবিষ্কার ছিলো এক অনন্য অধ্যায়। আজকে যে টেকনোলজি এত উন্নত, তার শুরু মোবাইল ফোন আবিষ্কারের মাধ্যমে হয়েছিল। কেননা দেখুন, মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িত হয়ে গেছে। মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত কল্পনা করতে পারি না।

মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন

মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন

আজকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। চমৎকার এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন আমেরিকার একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাহলে চলুন আমরা মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে আসি।


মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন ও মোবাইল আবিষ্কারের ইতিহাস

মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। তিনি ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল সফলভাবে মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন। তার আবিষ্কার করা মোবাইল কোম্পানির নাম ছিল মোটরওয়ালা। প্রথম সেই মোবাইলটির ওজন ছিল দুই কেজি। এবং সেই মোবাইলটিতে মাত্র ৩০ মিনিট কথা বলার জন্য ১০ ঘন্টা চার্জ দিতে হতো। 


মোবাইল ফোনের ইতিহাস?

মটোরোলা কোম্পানি সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে DynaTAC 8000X মডেলের মোবাইল ফোন তৈরি করে। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর পর দ্বিতীয় মডেল MicroTAC 9800 X. ১৯৮৯ সালে তৈরি করেন। পরবর্তীতে দুই বছর পর ১৯৯১ সালে বিশ্বের প্রথম সিম কাড GSM এর সাথে মোবাইল গুলোকে বাজারজাত করেন। 

১৯৭১ সালে মোবাইল ফোন বাজারজাত করা হলেও! তখন শুধুমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অনুমতি ছিল। এরপর মোবাইল ফোন জনপ্রিয়তা লাভ করলে ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের জন্য বাজারজাত করা হয়।

 

টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোনের আবিষ্কারক কে?

আমেরিকার স্বনামধন্য মোবাইল কোম্পানির IBM এর সঙ্গে Bolself মিলিত হয়ে। ১৯৯২ সালে ইতিহাসের প্রথম টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোন IBM Simon নামে আবিস্কার করেন। যদিও এখন আর আমরা এই কোম্পানি গুলোর নাম কোথাও শুনতে পাই না। কিন্তু তারা যদি এই টাচস্ক্রিন মোবাইল আবিষ্কার না করতো। 


তাহলে হয়তো আমরা আজকে এই সব স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারতাম না। IBM এবং Bolself কোম্পানি দুইটি একই সঙ্গে মিলিত হয়ে ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম টাচস্ক্রিন মোবাইল বাজারে আনে।


মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন

মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন


প্রথম আবিষ্কার করা মেবাইলের দাম কত ছিল?

মার্টিন কুপারের ইতিহাসের প্রথম মোবাইল Motorola dynaTAC 8000X নামের মডেলের দাম ছিল ২,৯৫,৬৬৯ টাকা। এই মোবাইলটি তৈরির প্রায় দশ বছর পর সর্বসাধারণের জন্য বাজারজাত করা হয়। ইতিহাসের প্রথম এই মোবাইলটি একবার কথা বলার জন্য ৩০ মিনিট চার্জ দিতে হতো। এছাড়াও মোবাইলটির ইস্টোরেজে ৩০ জনের নম্বর সেট করা যেত। 


সর্বপ্রথম ফোনের মধ্যে কথোপকথন কাদের মধ্যে হয়?

মোবাইল ফোন আবিষ্কারক মার্টিন কুপার তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী Dr. Joel S. Engel এর কাছে কল করেছিলেন। এবং ইতিহাসের সেই স্মরণকিত মুহূর্ত তাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এবং তাদের মধ্যে ইতিহাসের প্রথম ফোন কলে কথোপকথন হয়।


মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা?

আধুনিক এই যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া কেউ এক মুহূর্ত কল্পনাও করতে পারে না। যেন কিছু থাক আর না থাক মোবাইল ফোন থাকতে হবে। তাই বলাই যায় মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। এই মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার জন্য নয় এর অনেকগুলো প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ


  • কোন দুর্ঘটনার সময় মুহূর্তের মধ্যেই আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের কাছে খবর পৌঁছানো যায়।
  • ব্যক্তিগত বা অফিসের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট মোবাইলে পিডিএফ ফাইল, জিপ ফাইল এবং ইমেজ আকারে রাখা যায়।
  • অচেনা জায়গায় রাস্তা খুঁজে পেতে মোবাইল ফোনে থাকা গুগোল ম্যাপ ব্যবহার করা যায়।
  • পড়ালেখার ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোনে বই পড়া ও অনলাইন ক্লাস করা যায়। 


মোবাইল ফোন ব্যবহারের অসুবিধা?

আমরা যদি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া সবসময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। তাহলে একটা সময় এটি মোবাইল আসক্তিতে পরিণত হবে। যার কারণে  আমাদের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ঘুমের সমস্যা অর্থাৎ ঘুম কম হতে পারে। 

আমেরিকান এক ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী মোবাইল ফোন ব্রেন, মাথা এমনকি গলার টিউমারের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে স্মৃতিশক্তি ও ব্রেন শক্তি কমতে পারে। তাই যতটা সম্ভব প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। আসুন আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের অসুবিধা গুলো নিচে তালিকা আকারে দেখে নেই। যেমনঃ

  • ঘাড়ে ব্যথা
  • কানে কম শোনা
  • পর্নো আশক্তি হওয়া
  • নোমোফোবিয়া
  • হঠাৎ রিংটোন শোনা
  • চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া
  • শুক্রাণু কমে যাওয়া
  • অস্থি সন্ধি গুলোর ক্ষতি
  • চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া


আরো পড়ুনঃ ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ


মোবাইল ফোনের ব্যবহার?

বর্তমান আধুনিক যুগে গ্রাম থেকে শহর সবখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। এখন ছোট থেকে বড়, যুবক থেকে যুবতী সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আসলে এই মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে এই মোবাইল ফোনে কথা বলার পাশাপাশি বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ


  • লেখাপড়া করা যায়
  • ভিডিও কলে কথা বলা
  • ভিডিও ও ছবি তোলা
  • চিঠি আদান-প্রদান করা যায়
  • বিভিন্ন ধরণের গেম খেলা
  • গান শোনা ও ভিডিও দেখা
  • লাইভ টিভি সিরিয়াল ও খবর দেখা যায়।
  • ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি চালানো যায়।


বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা 

আমাদের বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। দেশে প্রথম মোবাইল ফোন নিয়ে আসে সিটিসেল। এই মোবাইল ফোনের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় সাধ্যের বাহিরে হওয়ায়। 


এবং সীমিত নেটওয়ার্ক এর কারণে এটি শুধু ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতো। এরপর প্রায় ৭ বছর পর ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামীণফোন ইজি নামে দেশে প্রথম চালু করে প্রি-পেইড প্যাকেজ।


শেষ কথা?

আমরা এতক্ষণে মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার ইতিহাস বিষয়ক জ্ঞানকে আরও দৃঢ় করবে। আর্টিকেলটি পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post