সালাম দেওয়ার নিয়ম

ইসলামে সালাম দেওয়া শুধু একটি অভিবাদন নয়, বরং এটি একটি ইবাদত ও সুন্নত। আমরা মুসলমানরা পরস্পরকে সালাম দিয়ে শান্তি, দোয়া এবং ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেই। কিন্তু অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না। 


সালাম দেওয়ার নিয়ম

সালাম দেওয়ার নিয়ম



আর তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো সালাম দেওয়ার ও নেওয়া মধ্যকার ১২ টি বিষয় সম্পর্কে। এই ১২ টি বিষয় সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। এবং সালাম দেওয়া ও নেওয়ার মাঝে কোন ভুল করা যাবে না।


সালাম দেওয়া এবং নেওয়ার নিয়ম?

সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আমরা অন্যের জন্য দোয়া করে থাকি। এই সালামের রয়েছে অনেক বরকত। সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়া সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

কেননা সালাম দেওয়া ও সালাম নেওয়াতে উচ্চারণ ভুল করলে হতে পারে গুনাহ। তাই অবশ্যই সালামের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নিচে যে ১২টি ভূল সালাম দেওয়া এবং নেওয়াতে করা জাবে না। যেমনঃ


১ অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া 

পরিচিত কিংবা অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। আমরা অনেক এই ভূল কাজটা করে থাকি। শুধু পরিচিত লোকদের সালাম দেই এটা গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।


২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া

এটিও একটি মারাত্মক ভূল প্রচলন, আমরা মনে করি ছোটরা বয়সের তুলনায় বড়দের সালাম দিবে। কিন্তু না, বড় বা বয়স্ক মানুষরাও ছোটদের সালাম দিবে। 

উদাহরণস্বরূপ শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। যেহেতু আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী। তাই আমরা আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করবো।


৩. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া

অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া এটি মারাত্মক ভুল কাজ। সালামের শুদ্ধ উচ্চারণ হলো আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ(ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ)। সালামের উত্তর হলো ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু (وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। তবে শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। কিন্তু উচ্চারণে কোন ভুল করা যাবে না।


৪. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম

আপনাকে কেউ একজন সালাম দিল, আপনি সালামের উত্তর দেওয়ার পর। আবার তাকে সালাম দিলেন। অনেক মানুষ আছেন এই কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। 


কিন্তু উত্তম হচ্ছে কারও সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কেউ যদি সালাম দেয় তাহলে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।


৫. সালাম দেওয়ার সময় মাথা এবং বুক ঝুঁকে নিচু করা

আমরা অনেকে সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেই৷ কিন্তু এটি করা জাবে না, এভাবে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে মানুষ আছে যারা পদস্থ বা বড় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এই ভূল কাজটা করে। কিন্তু হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে আমাদের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।


৬. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা

অনেক সময় কাউকে সালাম দিলে সে ব্যক্তি না শুনলে, আমরা আবার তাকে বলি আপনাকে সালাম দিয়েছি। কিন্তু এভাবে বলা ঠিক নয়। যদি শুনতে না পায় তাহলে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।


৭. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া

আমরা হয়তো এ বিষয় খুব কম খেয়াল রাখি, কিন্তু মনে রাখবেন। কারও সাথে সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। বেশ কিছুক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া অনুচিত।


সালাম দেওয়ার নিয়ম

সালাম দেওয়ার নিয়ম


৮. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া

কোন মজলিস বা অনুষ্ঠানে সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। তবে অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে। যেমনঃ 

মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথির সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম দেওয়া ইসলামী রীতির পরিপন্থি। সঠিক নিয়ম হচ্ছে শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সালাম দেওয়া। 


৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি

আমরা অনেক সময় একজনের মাধ্যমে অন্যজনকে সালাম পাঠাই। যেমনঃ অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। কিন্তু এভাবে বলা ঠিক নয়। সঠিক নিয়ম হচ্ছে অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম বলবেন। 

আবার একইভাবে সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন এভাবে না বলে বলতে হবে অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম বলেছেন। এক্ষেত্রে যিনি সালামের উত্তরদাতা সে শুধু প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তাকে এভাবে বলতে হবে ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।


আরো পড়ুন: শিশুর কান্না থামানোর দোয়া


১০. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম 

আমরা যখন কারও কাছ পাই তখন সালামের উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেক মানুষ সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে তৎক্ষনাৎ সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমন কাজ করা ঠিক নয়। মূলত দুজনের একজন সালাম দেবেন এবং অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।


১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম

অনেক সময় দেখা যায়, কোন অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরণের কোন মজলিস শেষ হওয়ার পর অনেকে সালাম দেন। এছাড়াও বিয়ের আকদ হওয়ার পর দেখা যায়, বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন। 

বর সালাম না দিতে চাইলে কিংবা কোনরূপ ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সালাম দাও। যদি সালাম না দেয় তাহলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার এবং ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়।


১২. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা

ইন্টানেট এর যুগে আমরা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোন কথা বলি, এটি ঠিক নয়। আগে সালাম দিতে হবে, এরপর অন্য কথা বলবেন। 

মোবাইল ফোন ছাড়া সরাসরি সাক্ষাতের বেলায় কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)


শেষকথা?

প্রিয় পাঠক আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এবং জানতে পারছেন সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post