জুমার নামাজ আমাদের মুসলিমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। আমরা প্রতি সপ্তাহে একবার জুমার নামাজ আদায় করি। জুমার নামাজের ফরজ রাকাত হলো দুটি। তবে জুমার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নাত ও পরে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়া হয়। ফলে মোট দশ রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
 |
জুমার নামাজের নিয়ত - জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম |
তাই আমরা যে সকল মুসলমান রয়েছি প্রত্যেকের উচিত জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম ও নিয়ত জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। জুমার নামাজের সময় শুরু হয় মূলত জোহরের সময় থেকে। তবে জোহরের নামাজের সময় থেকে জুমার আজান দেওয়া পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে নামাজ পড়া হলো মাকরূহ। জুমার আজান দেওয়ার পর থেকে শুরু করে খুতবা দেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টাতে সুন্নাত নামাজ পড়া যায়।
এবং খুতবা দেওয়ার পর থেকে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা হলো ফরজ। প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে জুমার নামাজের নিয়ত - জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম এবং জুমার নামাজের অন্যান্য ফজিলত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। তাই অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং সে অনুযায়ী আমল করুন।
জুমার নামাজের নিয়ত
প্রিয় মুসলিম বন্ধুগণ আমরা প্রথমে জুমার নামাজের নিয়ত এর পড়ে একে একে জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম এবং জুমার নামাজের অন্যান্য ফজিলত সমস্ত কিছু বিস্তারিত জানবো। তাহলে চলুন প্রথমে জুমার নামাজের নিয়ত দেখি নেই। যেমনঃ
نويت ان اسقط عن ذمتي فرض الظهر باداء ركعتي صلاة الجمعة فرض الله تعالى متوجها الى الكعبة الشريفة
الله أكبر
বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ:
আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম?
জুমার নামাজের নিয়ম হলোঃ
জুম্মার নামাজ আদায় করার আগে জুমার নামাজের নিয়ম গুলো কি কি পালন করতে হয়, তা নিচে সুন্দর করে তালিকা আকারে উল্লেখ করা হলো যেমনঃ
- প্রথমে গোসল করা
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা
- অযুর নিয়ম অনুযায়ী সুন্দর করে অযু করা
- মসজিদে গিয়ে ইমামের পেছনে জামাতবদ্ধ হওয়া
- খুতবা শোনা
তাহিয়াতুল ওযু পড়া
ওযু করার পর আমাদেরকে তাহিয়াতুল ওযু পড়তে হয়। এরপর দুই হাত একদম কাঁধ পর্যন্ত তুলে, আল্লাহু আকবার, বলে নামাজ শুরু করা। কায়াম অবস্থায় সূরা আল-ফাতিহা এবং অন্য যেকোন একটি সূরা পড়া। এরপর রুকু করা, সিজদা করা।
এভাবে এক রাকাত শেষ হওয়ার পর আবার দ্বিতীয় রাকাতে উঠে সূরা আল-ফাতিহা এবং অন্য যেকোন একটি সূরা পড়া। রুকু করা, সিজদা করা। এরপর আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরানো।
 |
জুমার নামাজের নিয়ত - জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম |
জুমার নামাজের ফজিলত?
জুম্মার নামাজ জামাতে আদায় করা অনেক বড় সবের কাজ। আমরা জুম্মার নামাজের ফজিলত গুলো নিম্নে উল্লেখ করলাম। যেমনঃ
- জুম্মার নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির রিজিক বৃদ্ধি পায়।
- জুম্মার নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির সম্মান বৃদ্ধি পায়।
- জুম্মার নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির সাত দিনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
- জুম্মার নামাজ আদায়কারী সেই ব্যক্তির সপ্তাহের সবচেয়ে ভাল দিনের আমলগুলোর মধ্যে একটি আমল করা হয়ে যায়।
জুমার নামাজ কত রাকাত?
পবিত্র জুম্মার নামাজের ফরজ হলো দুই রাকাত। তবে জুম্মার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ (কাবলাল জুমা) এবং পরে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ (বাদাল জুমা ) পড়া হয়ে থাকে।
তাই মোট ১০ রাকাত জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। জুম্মার নামাজের জন্য অবশ্যই সকল মুসলমানদের উচিত সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করা। এছাড়াও খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং এর শিক্ষাগুলো আমলে আনা উচিত।
জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব?
জুমার নামাজ হচ্ছে ফরজ। পবিত্র কুরআনে সূরা জুমারের নয় নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, যখন তোমাদের জুমারের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।
কুরআনের এই আয়াত টিতে জুমার নামাজের ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার হাদীসেও জুমার নামাজের ফরজ হওয়ার কথা সুন্দর করে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমারের দিন জামাতে উপস্থিত থাকে এবং মসজিদে নীরব হয়ে ইমামের খুতবা শুনে, তার জন্য দুই জুমারের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম) জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার এই বিষয়ে ইমামদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই।
আরো পড়ুন: ঘুম না আসার কারণ - রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম
কখন জুমার নামাজের ওয়াক্ত হয়?
শুক্রবার ছাড়া আমরা বাকি যে দিন গুলোতে যোহরের নামাজ আদায় করি। সেই যোহরের নামাজের ওয়াক্ত এ হচ্ছে জুমার নামাজের ওয়াক্ত। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় হলে তখন আজান দেওয়া হয়। আর আজান দেওয়ার সাথে সাথেই মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের উচিত।
জুমার নামাজের ফরজ?
জুমার নামাজের ফরজ হচ্ছে দুইটি।
জুমার নামাজের প্রথম ফরজ নিচে তালিকা আকারে সুন্দর করে দেওয়া হলঃ
- কায়াম অবস্থায় সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য আরেকটি যেকোন সুরা পড়া।
- রুকু করা ও সিজদা করা।
- দ্বিতীয় রাকাতে উঠে সূরা ফাতেহা পড়ার পর আরেকটি অন্য যেকোন সুরা পড়া।
- রুকু করা ও সিজদা করা।
- আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরানো।
জুমার নামাজের দ্বিতীয় ফরজ
জামাতে নামাজ আদায় করা ও জুমার নামাজের ফরজগুলো সঠিক ও সুন্দর করে আদায় করলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
জুমার নামাজের সুন্নত?
জুমার নামাজের সুন্নত হচ্ছে চারটি। আমরা নিচে জুমার নামাজের সুন্নত গুলো তালিকা আকারে উল্লেখ করলাম। যেমনঃ
- জুমার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া।
- জুমার খুতবা শোনা।
- জুমার নামাজের পর চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া।
- জুমার নামাজের পর দুরুদ শরীফ ও দোয়া করা।
জুম্মার নামাজের আগে কয় রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হয়?
জুমার নামাজের আগে ও পরে সুন্নত নামাজ পড়তে হয়। প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা জুমার নামাজের সুন্নত নামাজের সহহী মাসালা নিয়ে নিচে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হলো মুস্তাহাব।
জুম্মার নামাজের পর কয় রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হয়?
জুমার নামাজের পর চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হলো মুস্তাহাব। তাই এই চার রাকাত নামাজ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যেমন জরুরী তেমন অনেক বড় সুয়াবের কাজ।
জুমার নামাজের খুতবা?
শুক্রবার জুমার নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে খুতবা। খুতবা হচ্ছে ইমামের দ্বারা দেওয়া প্রশিক্ষণমূলক কিছু বক্তব্য, যেগুলো শুনে মুসল্লীরা ইমান আমল আরও সুন্দর করবে। জুমার নামাজের আগে এবং পরে ইমাম দুইটি খুতবা দেন। খুতবা শোনা সকল মুসলমানদের জন্য ফরজ।
অনেক ভাইয়েরা রয়েছেন যখন খুতবা শুরু হয়। তখন তারা সুন্নত নামাজ পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। এটি একদম ঠিক নয়। কেননা খুতবা শুনাও প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ফরজ করা হয়েছে। জুমার নামাজের খুতবা দুইটি অংশে বিভক্ত। যেমনঃ
প্রথম অংশে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা, তার একত্ববাদের ঘোষণা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম। এবং উপস্থিত সকলের প্রতি উপদেশ বিদ্যমান থাকে।
দ্বিতীয় অংশে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হয়।জুমার নামাজের খুতবায় যেসব বিষয় মুসল্লিদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
- ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাস।
- মানবতা ও সমাজসেবা।
- আধুনিক বিশ্বের সমস্যা ও সমাধান।
- ইসলামের বিধিবিধান ও আচার-আচরণ।
আরো পড়ুন: শিশুর কান্না থামানোর দোয়া
জুমার নামাজের খুতবা দেওয়া ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। খুতবা প্রদানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই ইসলাম বিষয় জ্ঞানী ও যোগ্য হতেই হবে।
খুতবা প্রদানের সময় ইমামকে অবশ্যই উচ্চকণ্ঠে ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে। খুতবায় তিনি যেসব বিষয় আলোচনা করবেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তার মুসল্লিদেরকে আমল করার জন্য সর্বদা উৎসাহিত করতে হবে।
জুমার নামাজের খুতবায় নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। চলুন তাহলে সেই বিষয়গুলো দেখে নেই। যেমনঃ
- খুতবায় আল্লাহ তায়ালার তাওহীদের উপর জোর দিতে হবে।
- খুতবায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে অনুসরণ করার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে।
- খুতবায় মুসল্লিদেরকে সমাজসেবা ও মানবতার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
- খুতবায় মুসল্লিদেরকে ঈমান ও আমলকে শক্তিশালী করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
জুমার নামাজের পর দুরুদ শরীফ ও দোয়া করা
জুমার দিনে জুমার নামাজের পর দুরুদ শরীফ ও দোয়া করা হচ্ছে সুন্নত। এই সময় আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য, সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য এবং পরিবার-পরিজনের জন্য ও সারা বিশ্বের মানুষের জন্য দোয়া করা উচিত।
জুমার নামাজ ছুটে গেলে করনীয়?
জুমার নামাজ কোন কারণে ছুটে গেলে তা অবশ্যই যোহরের নামাজের মতোই আদায় করতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, জুমার নামাজের ফরজ দুই রাকাত হলেও জুমার নামাজ ছুটে গেলে তা যোহরের মতো চার রাকাত আদায় করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা, এই আর্টিকেল থেকে যদি কোন বিষয়ে না বুঝেন কিংবা বুঝতে সমস্যা হয়। তাহলে আপনার মসজিদের ইমামের কাছ থেকে কিংবা অন্য কোন একজন ভালো আলেমের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
শেষ কথা?
জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমার নামাজের সঠিক নিয়ম জেনে জুমার নামাজ আদায় করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি বুঝতে পারছেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ