নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের দেশে নিম পাতা অতি পরিচিত একটি ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ বৃক্ষ। এটি দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম বহু বর্ষজীবী ও চিরসবুজ গাছ, যার প্রতিটি অংশে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণাগুণ। আমাদের এই সাব কন্টিনেন্ট দেশগুলোতে আনুমানিক ৫ হাজার বছর আগে থেকে নিমকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

কালের পরিক্রমায় এটি এখন সারা বিশ্বে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম গাছে রয়েছে ত্রিশ ধরনের ঔষধি গুণাগুণ। ঔষধি গুণাগুণ সম্পূর্ণ এই গাছটি আমাদের ত্বক থেকে শুরু করে শরীরের অভ্যন্তরীণ নানান সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে থাকে। তাই আজকে আমরা আমাদের প্রয়োজনের স্বার্থে, নিম্নে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম গাছের সকল যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।


নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিম পাতা আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস্ট্রিক ও অম্বলের সমস্যা কমায়, দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির ফোলাভাব কমায়, ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস দূর করে। 

এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, জ্বর ও চর্মরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। আমরা আজকে নিম পাতার উপকারীতা সম্পর্কে নিচে একে একে সমস্ত কিছু বিস্তারিত আলোচনা করছি।


নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতার শেষ নেই, এটি আমাদের মানবজাতীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃক্ষ। আর তাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিমকে জাদুকরী পাতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 


আজকে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সমস্ত কিছু বিস্তারিত জানবো। আসুন আমরা প্রথমে নিম পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নেই। যেমনঃ


চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতা ভেষজ ওষুধ হিসেবে চর্মরোগ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আলসার, চিকেন পক্স চিকিৎসায়ও অত্যন্ত কার্যকর এই নিম পাতা। 


অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক প্রতিদিন গোসলের পানিতে একমুঠ নিম পাতা দিয়ে গোসল করার পরামর্শ দেন। এভাবে গোসল করলে চর্মরোগ দূরে থাকবে এবং শরীরও ঠাণ্ডা থাকবে।


চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

যাদের ত্বকে চুলকানির মত মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। তারা নিয়মিত নিম পাতা সেদ্ধ করে। সেই পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ভালো করে ধূয়ে ফেলুন। এছাড়াও আপনারা চুলকানি দূর করার জন্য নিম পাতার তেল বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। 


চুলকানি দূর করার জন্য নিয়মিত নিমপাতা পানিতে মিশে গরম করে সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি চুলকানি দূর হবে ইনশাল্লাহ।


নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

বর্তমান সমাজে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে প্রায় ছেলে-মেয়েদের ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া এটি একটি অতি পরিচিত সাধারণ সমস্যা। বলা হয় তরুণ বয়সে বরুণ (ব্রণ) উঠবেই। 


এই ব্রণ সাধারণত ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। নিম পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই নিম পাতার পেস্ট কিংবা নিম পাতার রস বানিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। 


নিম পাতার পেস্ট বা রস লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক পরিস্কার হবে এবং ত্বকের সমস্ত দাগ চলে যাবে ইনশাআল্লাহ।


এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জি দূর করার জন্য একটি প্রাকৃতিক সমাধান হচ্ছে নিম পাতা। আপনার যদি শরীরে এলার্জি থাকে তাহলে কয়েকটি নিমপাতা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। এছাড়াও কাঁচা হলুদের সাথে নিমপাতা পেটে একটি পেস্ট তৈরি করে শরীরে লাগাতে পারেন। 


পেস্ট লাগানোর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো ত্বকের সংক্রমণ ও অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।


মুখে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতা মুখের জীবাণু ধ্বংস করতে ও মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। নিমে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, যা মাড়ির ব্যথা কমায় এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে। নিমের ডগা দিয়ে বানানো মেসওয়াক দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার হয়। এবং দাঁতের ক্যাভিটি দূর হয়।


চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নের জন্য অত্যন্ত উপকারী নিম পাতা। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান, যা চুলের খুশকি দূর করতে এবং দ্রুত চুল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। চুলের যত্নে প্রতিদিন কয়েকটি নিম পাতা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে, সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। 


তবে মনে রাখবেন, পানি অবশ্যই হালকা কুসুম গরম হতে হবে। এভাবে কয়েকদিন চুল ধুয়ার ফলে মাথার ত্বক পরিস্কার হবে, চুলের গোড়া মজবুত হবে। এবং নতুন করে চুল গজাতে শুরু করবে ইনশাআল্লাহ।


রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার

রূপচর্চায় নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতা শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো ছোপ, চুলকানি, ব্রণের দাগ এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই নিম পাতার রস ও কাচা হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এবং লাগানোর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলুন।


আরো পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়


দাউদে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতা মূলত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণের জন্য পরিচিত। যা দাউদ ও অন্যান্য ত্বকের ছত্রাকজনিত সমস্যায় ব্যবহৃত করা হয়। তাই আপনারা দাউদ দূর করার হবে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারের।


মাথায় নিম পাতার ব্যবহার

এমন অনেকের মাথার ত্বকে চুলকানি ভাব হয়। নিম পাতার রস মাথায় নিয়মকরে লাগালে এই চুলকানি কমে যায়। চুল অনেকটা শক্ত হয় এবং চুলের শুষ্কতা কমে যায়। নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করলে চুল নতুন করে গজাতে শুরু করে।


ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। যা দূত ত্বকের ক্ষত গভীর থেকে শুকাতে সাহায্য করে। যেমনঃ কাটা-ছেঁড়া, পুড়ে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। 


ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করুন। এটি আপনার ত্বককে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।


নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতা আমাদের ত্বকের জন্য যেমন উপকারি তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর অর্থাৎ অপকারি দিকও রয়েছে। একটি কথা প্রচলন আছে না, উপকারের পিছে কোন না কোন ক্ষতি থাকে। 


তেমনি নিম পাতার উপকারের পিছে এর কিছু ক্ষতিও রয়েছে। যা আমাদের হজমের সমস্যা, কিডনি এমনকি লিভারের সমস্যাও হতে পারে। তাই আসুন আমরা নিমপাতা ব্যবহারের আগে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেই। যেমনঃ


১. কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

বলা হয় কোন কিছুই অতিরিক্ত  ভালো না, অতিরিক্ত নিমপাতা আমাদের কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আমরা জানি নিমপাতা শরীরের ক্ষতিকর টনিক্স বের করে দেয়। 


আরো পড়ুন: গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা


তবে যদি নিমপাতা নিয়মিত অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়। তাহলে তা কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এমনকি কিডনি দুর্বল করে দিতে পারে।  


২. রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে

নিম পাতার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। যাদের রক্তচাপ কম তাদের জন্য এটি মারাত্বক ক্ষতিকর একটি বৃক্ষ হতে পারে। 


অতিরিক্ত নিম পাতা গ্রহণ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে, এতে শরীর দুর্বল, মাথা ঘোরা এমনকি অজ্ঞান হওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে।



৩. গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

গর্ভবতী নারীদের জন্য নিম পাতা অত্যান্ত বিপজ্জনক। কারণ নিম পাতা গর্ভবতী মায়াদের জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়।


৪. হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে

নিম পাতার মারাত্মক তেতো স্বাদ অনেকের জন্য সহ্য করা অনেক কঠিন। অতিরিক্ত নিমপাতা গ্রহণ পেটে অস্বস্তি, গ্যাস্ট্রিক কিংবা বদহজমের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।


৫. লিভারের ক্ষতি করতে পারে

অতিরিক্ত নিম পাতা গ্রহণ লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে নিম পাতা খেলে লিভারের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। 


অতিরিক্ত নিমপাতা লিভার এনজাইমের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে লিভারের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।


আরো পড়ুন: লাল শাকে কি এলার্জি আছে


শেষকথা?

নিম পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের লিভার, মস্তিষ্ক এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিমপাতার আরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে যা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। আশাকরি আজকের আর্টিকেল থেকে নিমপাতা সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানতে পেরেছেন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post