যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের যেন একটু বেশি ভোগান্তি। তৈলাক্ত ত্বকে যতই মেকআপ করেন না কেন। একটু পর ত্বক তেলতেলে ভাব হয়ে মেকআপ নষ্ট হয়ে যায়। আবার ব্রণ তো আছেই। রাস্তায় বের হলে তৈলাক্ত ত্বকে ধুলা-ময়লা আটকে বিভিন্ন জীবাণু সৃষ্টি করে৷
 |
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় |
অনেক সময় এর কারণে ব্রণের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই আজকে আমরা এই সমস্যার সমাধান নিয়ে নিম্নে সুন্দর করে আলোচনা করেছি। আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়লে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়, তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করার উপায়, মোট কথা এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা তৈলাক্ত ত্বকের সকল সমস্যার সমাধান পাবেন।
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়?
একজন মানুষের সৌন্দর্য নির্ভর করে স্বাস্থ্যজ্জল, হেলদি, গ্লোয়িং ও দাগ মুক্ত ত্বকের উপর। আমরা একটা ভূল ধারণা করি যে, একজন মানুষের সৌন্দর্য তার গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু না, কালো ফর্সা, শ্যামলা সব রঙের মানুষেই কিন্তু সৌন্দর্য রয়েছে। তাই বিভিন্ন ধরনের দাগ ও তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার মুখ পরিস্কার করুন। স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়াইল পারক্সাইডযুক্ত মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
প্রতিদিন হালকা ময়েশ্চারাইজার করুন। এছাড়াও কিছু খাবার ও প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার যায়। যেমনঃ
১. ডিম, শসা ও পুদিনার ব্যবহার
বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডিম থেকে পাওয়া এই সাদা অংশটি ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করে। এবং ত্বক টানটান করতে সাহায্য করে। ডিমের সাদা অংশের সাথে শসা ও পুদিনা পাতার পেস্ট মিশিয়ে মুখে লাগান।
এরপর আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। এতে একদিকে ডিমের সাদা অংশ তেলতেলে ভাব দূর করবে। শসা ত্বকে ঠান্ডা রাখবে৷ এবং পুদিনার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের ব্রণ দূর করবে।
২. অলিভ তেল ও লেবুর রস
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার জন্য এক চামচ অলিভ তেল ও হাফ চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন।
এই মিশ্রণ মুখে লাগানোর ১০ মিনিট পর সুন্দর করে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার মুখের ব্রণ, ফুসকুড়ি ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
৩. স্ট্রেস কমান
স্ট্রেস এটি আমাদের জন্য মারাত্মক একটি বিষয়। যারা এই স্ট্রেস অর্থাৎ মানুষিক চাপে থাকে, তাদের ঘুমের অভাব হয়। নিয়মিত ঘুম না হওয়ার কারণে এবং সব সময় মানসিক চাপে থাকার কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যা ব্রণ তৈরির অন্যতম কারণ। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা রাত জেগে মোবাইল দেখার কারণে অল্প বয়সে ব্রণে সমস্যা দেখা দেয়।
৪. বেসন ও টক দইয়ের মিশ্রণ
বেসন ও টক দই এই দুটি উপাদান আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। বেসনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন। যা তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ত্বককে করে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
এছাড়াও টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি। যা ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে নরম ও মসৃণ করে।
আরো পড়ুন: দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ
৫. কলা দিয়ে মুখের ব্রণ দূর
কলায় রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ই এবং পটাশিয়ামের মতো উচ্চমানের পুষ্টি। এই পুষ্টি উপাদানগুলো মুখে অতিরিক্ত তেল বা গ্রিজ যোগ না করে ত্বকের কোষগুলোকে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
সাধারণ মুখের স্ক্রাবের জন্য একটি পাকা কলা ভর্তা করে এক চামচ দুধ এবং দুই চামচ মধু মেশান। আপনার পরিষ্কার ত্বকে প্রয়োগ করুন, পাঁচ মিনিটের জন্য ম্যাসেজ করুন, ২০ মিনিটের জন্য রাখুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
৬. গোলাপ জল
গোলাপের নির্যাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গোলাপ জলের সাথে একটু বেসন মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূরসহ বিভিন্ন কালো দাগ, ছোপ সমস্ত কিছু দূর হয়।
 |
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় |
ব্রণের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো?
বর্তমানে আপনারা বাজারে বিভিন্ন ধরণের ব্রণ দূর করার জন্য ফেসওয়াস পাবেন। কিন্তু সেগুলো অবশ্যই স্যালিসিলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid) ও বেনজয়াইল পারক্সাইড (Benzoyl Peroxide) যুক্ত হতে হবে। তবেই আপনার মুখের ব্রণ অল্প দিনের মধ্যে চলে জাবে।
এই ফেসওয়াস গুলো ব্যবহার করলে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মরে, অতিরিক্ত তেল কমায় এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও নিম, গ্রিন টি ও অ্যালোভেরা-যুক্ত ফেসওয়াশ প্রদাহ কমাতে ও ত্বককে শান্ত করতে সাহায্য করে।
দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়?
অল্প দিনের মধ্যে ব্রণ দূর করতে, প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ব্রণ পরিষ্কার করুন। পারলে হালকা গরম সেঁক দিতে পারেন। ফেসওয়াসের ক্ষেত্রে বেনজয়াইল পারক্সাইড ও স্যালিসিলিক অ্যাসিড যুক্ত ওভার-দ্য-কাউন্টার পণ্য ব্যবহার করুন।
ব্রণে বারবার হাত দেওয়া বা খোঁটাখুঁটি করা থেকে বিরত থাকুন। দ্রুত ব্রণ দূর করার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন যেমনঃ অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্রণ দূর করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের খুবই প্রয়োজন। তাই দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান।
ব্রণ দূর করার ক্রিম?
ব্রণ দূর করতে স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন। স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করে এবং নতুন ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও বেনজয়াইল পারক্সাইড ও রেটিনলযুক্ত ক্রিম ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং মৃত চামড়া দূর করে। তাই ব্রণ দূর করার জন্য আপনারা এধরণের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
মুখ সুন্দর করার উপায়?
মুখ সুন্দর করতে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান। কেননা গভীর ঘুম ত্বকের কোষ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করুন।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ৩ থেকে ৪ লিটার পানি প্রয়োজন। এছাড়াও মুখ সুন্দর করার কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। যেমনঃ
- টক দই ত্বকের যত্নে টক দই ব্যবহার করতে পারেন, এটি ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে।
- লেবুর রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- কলা ও দুধ কলা চটকে তার সাথে দুধ মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
 |
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় |
ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করার উপায়?
রূপচর্চা বা ত্বকের যত্নের সঙ্গে মেয়েদের নামটি যেভাবে সব সময় উচ্চারিত হয়। ছেলেরা ঠিক ততটাই থেকে যায় উপেক্ষিত। ছেলেদের ত্বকে যে একেবারে সমস্যা হয় না তা কিন্তু না।
বেশিরভাগ ছেলেদের ক্ষেত্রে অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দেখা যায়। ফলস্বরূপ ব্ল্যাক হেডস বা ত্বক কালো দেখায়। তাই ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করার উপায় আমরা নিচে উল্লেখ করলাম। যেমনঃ
১. লেবুর রস
লেবুর রসের সাইট্রিক অ্যাসিড ও ভিটামিন-সি ত্বক ফর্সা করতে এবং কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তবে লেবুর রস সরাসরি ত্বকে লাগানোর আগে অল্প একটু জল মিশিয়ে নিতে পারেন।
২. ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে শসার রস ও পুদিনাপাতার পেস্ট মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এটি ত্বক টানটান করে এবং অতিরিক্ত তেল দূর করে।
৩. অলিভ অয়েল বা বাদাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ বাদাম এবং সাথে নাশপাতি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
উপসংহার
শুধুমাত্র গায়ের রং দিয়ে সৌন্দর্য মাপা যায় না। সুন্দর চেহারা মহান আল্লাহ তাআলার দান। প্রিয় পাঠক উপরে উল্লেখিত উপায় গুলো অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
আশকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। আগামী আর্টিকেলে কি বিষয় জানতে চান। তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।