আমাদের দেশ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ। তাই আমাদের এই শোনার জন্মভূমিতে নানান রকম শাকের ফলন হয়। শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি হচ্ছে কলমি শাক। এই কলমি শাকে ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি আয়রন এবং আরও অন্যান্য বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
 |
কলমি শাকের উপকারিতা |
আমাদের দেশে এত এত শাকসবজির ভিড়ে আমরা হয়তো জানিই না। কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা কি? কলমি শাক খাওয়ার ক্ষতিকরগুলো দিক কি এবং কলমি শাক খেলে কোন কোন রোগ দূরে থাকা সম্ভব হয়। তাই আসুন অত্যন্ত পুষ্টিকর এই শাক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
কলমি শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা?
কলমি শাক জলে এবং স্থলে দুই জায়াতেই বেড়ে উঠে। তাই হয়তো এই শাকটি বাজারে অনেক কম মূল্যে পাওয়া যায়। খড়া কিংবা বন্যা সব রকমের আবহাওয়ায় এই শাকের ফলন হয় বলেই মানুষ এই শাকে গুরুত্ব দেয় কম।
কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন না, এই শাকে অনেক কার্যকর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আমাদের দেহের জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই আসুন প্রথমে আমরা কলমি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
কলমি শাকের উপকারিতা সমূহ?
কলমিশাক মূলত একটি আঁশজাতীয় খাবার। কলমি শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, রক্তশূন্যতা দূর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং লিভার ও হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
শুধু একটুকুই নয়, কলমি শাক খাওয়ার আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। আসুন আমরা নিচে একে একে সমস্ত কিছু বিস্তারিত দেখে নেই। যেমনঃ
ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে
মানব জাতির জন্য মারাত্মক রোগের নাম হচ্ছে ক্যান্সার। মরণঘাতী এই ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখতে কাজ করে কলমি শাক। কলমি শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ব়্যাডিকেলস বের করে দেয়।
এতে মানব দেহে মরণঘাতী ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি হতে পারে না। ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তাই আপনারা নিয়মিত খাবার তালিকায় কলমি শাক রাখতে পারেন।
হাড় মজবুত করে
কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-কে। পুষ্টিকর এই উপাদানগুলো হাড়কে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি অস্টিওপরোসিস-এর মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়।
লিভার ভালো রাখে
যাদের লিভার সমস্যা বা লিভার দুর্বল তারা বেশি বেশি কলমি শাক খেতে পারেন। এক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে লিভারে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ কলমি শাক বের করে দিতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
এছাড়াও জন্ডিসের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে কাজ করে এই কলমি শাক। তাই লিভার ভালো রাখতে আপনারা নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে
কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তস্বল্পতার মত জটিল সমস্যা দূর হয়।
হার্ট ভালো রাখে
কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন-সি। এগুলো আমাদের দেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। কলমি শাক নিয়মিত খেলে হার্টের রক্তনালী পরিষ্কার থাকে। তাই হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কলমি শাক রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কাজ করে
বর্তমানে আমরা প্রত্যেকে মোবাইল ডিভাইসে আসক্ত। এখন আমাদেরকে অল্প বয়সে চশমা চোখে দিতে হয়। আমার যেটুকু মনে হয়, মোবাইলের কারণে এই চোখের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কলমি শাক খাওয়া প্রয়োজন। কলমি শাকে থাকা ভিটামিন-এ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রত্যেকটি দেহের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কেননা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ব্যাকটেরিয়া এমনকি ভাইরাসজনিত অসুখ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আর এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আপনারা নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন।
 |
কলমি শাকের উপকারিতা |
কলমি শাকের অপকারিতা সমূহ?
আপনারা এতক্ষণে কলমি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। কিন্তু শুধু উপকারিতা জানলেই হবে না, এর অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে হবে।
কেননা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে না জেনে, নিয়মিত কলমি শাক খেলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আসুন আমরা কলমি শাকের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। যেমনঃ
আরো পড়ুন: দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ
হজম সমস্যা সৃষ্টি
অতিরিক্ত ফাইবার দুর্বল মানুষদের ক্ষেত্রে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কেননা অতিরিক্ত ফাইবার হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলে গ্যাস এমনকি ডায়রিয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে।
অক্সালেট
কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট নামক উপাদান থাকে। যা বেশি পরিমাণে খেলে অনেক সংবেদনশীল ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তাই যাদের কিডনি সংক্রান্ত কোন সমস্যা রয়েছে। তারা অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী কলমি শাক খাবেন।
কীটনাশকের ব্যবহার
বর্তমান বেশিরভাগ ফসলী জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তাই শাকসবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো করে ধুয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিদ্ধ করা প্রয়োজন। তা না হলে কীটনাশক পেটের ভিতর প্রবেশ করে নানান রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুন: লাল শাকে কি এলার্জি আছে
শেষকথা
আপনারা এতক্ষণে আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পারছেন। কলমি শাক একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী।
তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনারা নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। আজকে এ পর্যন্ত,ই আগামী দিনে এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আইটিকেল নিয়ে হাজির হবো। ইনশাআল্লাহ